ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা কেন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলো | How Brazil Argentina arch rivals@Ultimate Bangla


YouTube https://youtu.be/SSysOFl2-8c

ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা কিভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলো

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা ফুটবল বিশ্বের একটি বড় ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা যা দেশ দুইটির জাতীয় ফুটবল দল, এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। এই দুইটি দলের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে অনেক সময় "দক্ষিণ আমেরিকানদের যুদ্ধ" বলা হয়।

ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা কিভাবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী হলো তা নিয়ে আলোচনা করা হবে আজকের এই পর্বে আপনি যদি আল্টিমেট বাংলা চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তবে অবশ্যই চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে বেল আইকনটি বাজিয়ে দেবেন



দক্ষিণ আমেরিকার দুই প্রতিবেশী দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। বহু বছর আগে যখন ইউরোপ থেকে পর্তুগিজ ও স্প্যানিশরা নিজেদের উপনিবেশ গড়তে এ মহাদেশে পাড়ি জমায়, তখনই তাদের বিরোধ লাগে ভূমি দখল নিয়ে। কে কোন অঞ্চলের দখল নেবে, তা নিয়ে রক্তক্ষয়ী লড়াই পর্যন্ত হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত স্প্যানিশরা দখল করে আর্জেন্টিনার অঞ্চল আর পর্তুগিজরা ব্রাজিল। সেখান থেকে মূলত উপনিবেশকেন্দ্রিক রেষারেষির শুরু। দুই দেশেই ঔপনিবেশিক ইউরোপের ইতিহাস আর সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তাতে ভিন্নতা অনেক। যেমন আর্জেন্টাইনরা কটাক্ষ করে ব্রাজিলের বর্ণবৈচিত্র্য নিয়ে, আবার ব্রাজিল শোনায় নিজেদের বৃহত্তর অর্জনের গল্প। আর্জেন্টিনার মানুষ কখনো পর্তুগিজ শিখতে আগ্রহী নয়, কিন্তু ব্রাজিলিয়ানদের স্প্যানিশ শিখতে তেমন আপত্তি নেই। সমর্থক হিসেবে আর্জেন্টাইনরা খুবই কোলাহলকেন্দ্রিক, মাঠে তারা উপস্থিত থাকলেই স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তোলে গ্যালারি। ওদিকে ব্রাজিলিয়ানরা শুরুর জাতীয় সংগীত ছাড়া বেশির ভাগ সময়েই চুপচাপ থাকে

খেলার মাঠে এসে আরও প্রবল হয়ে ওঠে এসব প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যেকোনো খেলাতেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াই মানে আলাদা উত্তেজনার সৃষ্টি। তবে ফুটবলে এর মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
শুরুটা ১৯২৫ সালে। সেবার কোপা আমেরিকার ম্যাচে কেবল ড্র করলেই শিরোপা জিতত আর্জেন্টিনা। কিন্তু আর্জেন্টিনার মাঠে ব্রাজিল এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে। ব্রাজিলের আরও একটি বিপজ্জনক আক্রমণের সময় আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার রামন মাত্তিস মারাত্মক এক ফাউল করে গোলের সুযোগ বন্ধ করে দেন। মেজাজ হারিয়ে তাঁকে লাথি মেরে বসেন ব্রাজিলের ফ্রিডেনরিচ, তাঁকে ঘুষি মেরে পাল্টা জবাব দেন মাত্তিস। ব্যস! এই উত্তেজনা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল স্টেডিয়ামে উপস্থিত ৩০ হাজার দর্শকের মধ্যে। খেলোয়াড়েরা তো বটেই, দর্শকেরাও জড়িয়ে পড়লেন হাতাহাতি-মারামারিতে। পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর সেই ম্যাচ ২-২ গোলে ড্র করে কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। ব্রাজিলের দাবি, ওই মুহূর্তে অমন গন্ডগোল না বাধলে শেষটা তাদের পক্ষেই থাকত!
তারপর থেকে বহু জল গড়িয়েছে। ফুটবল বিশ্বকাপের অর্জনে আর্জেন্টিনাকে ছাড়িয়ে বহু দূরে দাঁড়িয়ে আছে ব্রাজিল। কিংবদন্তি পেলের হাত ধরেই তিনটে বিশ্বকাপ জিতেছে তারা। তখন পেলের কীর্তি নিয়ে ব্রাজিল সমর্থকদের বড়াই ছিল একচ্ছত্র। খানিকটা ভারসাম্য আনতেই যেন আর্জেন্টিনায় উত্থান হলো ম্যারাডোনার। যিনি একক নৈপুণ্যে জেতালেন আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। ভাগ্য সহায় থাকলে তৃতীয়টিও তাঁর হাত ধরেই আসত। তাতেও অবশ্য ম্যারাডোনার কৃতিত্ব কমে না। বরং আগের প্রজন্মের গ্রেট পেলের সমান মর্যাদা পেলেন ফুটবল বিশ্বে। আর্জেন্টাইন ভক্তদের কাছে যদিও তিনিই শ্রেষ্ঠ ফুটবলার। তবে পেলে-ম্যারাডোনা দুজনেই যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার প্রতিদ্বন্দ্বিতার লড়াইয়ে সমর্থকদের বড় অস্ত্র—এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তারপর কালে কালে দুই দেশেই দেখা মিলেছে আরও অনেক গ্রেটের। ব্রাজিলের রোমারিও, রিভালদো, রোনালদো, রোনালদিনহোদের বিপরীতে আর্জেন্টিনারও ছিলেন বাতিস্তুতা, রিকুয়েলমেরা। আর লিওনেল মেসি তো সর্বকালের সেরাদের একজন। তবু বর্তমান ব্রাজিলের পোস্টারবয় নেইমারকে টেনে মেসির বিপক্ষে দাঁড় করান ব্রাজিল ভক্তরা।
কিন্তু মাঠের এ লড়াই তাঁদের জন্য কেবল মাঠেই। মাঠের বাইরে মেসি-নেইমারের দারুণ বন্ধুত্ব। আবার প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের মানুষেরাও একে অপরের প্রতি বন্ধুসুলভ। মাঠের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিতার বাইরে ফুটবল এভাবেও এক সূত্রে গাঁথতে পারে—এটাই যেন ফুটবলের সবচেয়ে পুরোনো সৌন্দর্য! বর্তমান সময়ে কাপ বিশ্বকাপ 2022 চলমান কিন্তু এ সময়ে এসেও ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার ফ্যানফ্যানদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিরাজ করছে।

No comments

Theme images by chuwy. Powered by Blogger.