ন্যাটো : উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের শক্তিশালী সমর সংস্থা | NATO : Major Security Force Western in World
YouTube https://youtu.be/Czo_GGGRZQY
হ্যালো বন্ধুরা।। পৃথিবীর বৃহত্তম সামরিক জোট ন্যাটো। বৃহত্তম হওয়ার পাশাপাশি শক্তিশালীও বটে। আজকের দিন পর্যন্ত ন্যাটোকে হারানোর মতো শক্তিশালী সামরিক জোট এখন পর্যন্ত তৈরি হয় নি । ইউক্রেন সে সামরিক জোটে যোনদানে ইচ্ছা পোষণ করার পর ২০২২ সালের ফ্রেব্রুয়ারীর পর থেকে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের শিকার হচ্ছে সেই সামরিক জোট সম্পর্কে আলোচনা করবো আজকের এই পর্বে। আপনি যদি আলটিমেট বাংলা চ্যানেলে নতুন হয়ে থাকেন তবে চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব করে বেল আইকনটি বাজিয়ে দিন।
উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট বা ন্যাটো । ইংরেজি: North Atlantic Treaty Organisation । ফরাসি: OTAN । ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত একটি সামরিক সহযোগিতার জোট। প্রথমদিকে ন্যাটোর স্থাপনা হয়েছিল ঠান্ডা লড়াই বা কোল্ড ওয়ার চলাকালীন, সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউনাইটেড স্টেটস, ক্যানাডা এবং অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোকে যৌথ নিরাপত্তা প্রদানের উদ্দেশ্যে। ন্যাটোই হল মার্কিন যুক্তরাষ্টের তৈরী প্রথম শান্তিকালীন সামরিক জোট, যা যুক্তরাষ্ট্রকে পশ্চিম গোলার্ধের বাইরে কূটনৈতিক প্রবেশাধিকার দিয়েছিল।
ন্যাটোভুক্ত একটি দেশের উপর হামলার অর্থ হচ্ছে ন্যাটোভুক্ত প্রতিটি দেশের উপর হামলা।এ ক্ষেত্রে ন্যাটোভুক্ত দেশ গুলো যৌথভাবে হামলার মোকাবেলা করবে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলস্বরূপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত রাশিয়ার মতো দুটি সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশের সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে চলতে থাকা ঠান্ডা লড়াইয়ের ফলে রাশিয়ার শক্তি বিপজ্জনক অবস্থায় বৃদ্ধি পেতে থাকে।
এর ফলে, সারা বিশ্বে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি সামলানোর জন্যেই এই প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়
এই সময় মার্কিনসহ নানান পশ্চিমী দেশ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মতাদর্শে দেশ শাসন করছিল।
অপরদিকে, সোভিয়েত ইউনিয়ন বলপূর্বক সারা বিশ্বে তাদের কমুনিজম রাজনৈতিক মতাদর্শ বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছিল।
তাই, এই ব্যাপারে ন্যাটোর উদ্দেশ্য ছিল আগ্রাসী কমুনিজম বিস্তার থেকে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে রক্ষা করা।
এই সদর দপ্তরেই অংশগ্রহণকারী দেশ এবং ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর মধ্যে আলোচনা এবং সহযোগিতার বিষয়ে কথোপকথন সারা হয়। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ। আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এই জোটের সদস্য। এছাড়া তুরস্কও এই জোটের সদস্য। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ১২টি। ন্যাটোর বর্তমান সদর দপ্তর যদিও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, পূর্বে এর সদর দপ্তর ছিলো ফ্রান্সের প্যারিসে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তুরস্ক ও আলবেনিয়াই কেবল মুসলিম দেশ। ন্যাটো একটি সম্মিলিত প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী। ন্যাটোর বর্তমান সদস্য-দেশের সংখ্যা ৩০। এদের মধ্যে ২৮ টি দেশ ইউরোপের, আর বাকি ২ টি দেশ উত্তর আমেরিকার৷ ন্যাটোর বর্তমান একটিভ সৈন্য সংখ্যা ৩.৫ মিলিয়ন। এবং ৪০ হাজার সেচ্ছাসেবক রয়েছে। ন্যাটোর পারমানবিক শক্তি সমৃদ্ধ দেশ এবং জাতিসংঘে ভেটো প্রদান করতে পারে এমন দেশ তিনটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স। এছাড়াও ন্যাটোর নিউক্লিয়ার শেয়ারিং চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা রাখা আছে বেলজিয়াম,জার্মানি,ইতালি,নেদারল্যান্ডস এবং তুরস্কে বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে।
এই ন্যাটোর প্রধান দুটি শাখা রয়েছে, এই দুটি হল
রাজনৈতিক শাখা ও . সামরিক শাখা।
ন্যাটো সদর দপ্তরে সকল সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা একত্রিত হয়ে ঐক্যমত অনুসারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে একত্রিত হন।
১৯৫২ সালে গ্রীস ও টার্কি নাটোতে যোগদান করে। জার্মানি ১৯৫৫ সালে এই জোটের সাথে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে ১৯৮২ সালে স্পেন এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ গ্রহণ করে। ১৯৯৯ সালে হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, এবং চেক রিপাবলিক NATO-এর সদস্য হয়। এস্টোনিয়া, ল্যাটভিয়া, বুলগেরিয়া, রোমানিয়া, লিথুয়ানিয়া, স্লোভেনিয়া, ও স্লোভাকিয়া ২০০৪ সালে এই জোটের চুক্তি স্বাক্ষর করে। ক্রোয়েশিয়া এবং আলবেনিয়া ২০০৯ সালে ন্যাটোর সাথে যোগদান করে। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে মন্টেনেগ্রো এবং সম্প্রতি নর্থ ম্যাসেডোনিয়া ২০২০ সালে এই জোটের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়।
ন্যাটোর সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর খরচ পৃথিবীর সকল দেশের সামরিক খরচের প্রায় ৭০ ভাগ। সবচেয়ে বেশি খরচ বহন করে- যুক্তরাষ্ট্র ৭৩%। এই সংগঠনের মূলমন্ত্র হল : বিবেচনায় নিরবচ্ছিন্ন মন । সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তির পরে ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সামরিক ব্যয় ২৮ শতাংশ হ্রাস পেতে দেয়। ১৯৯০ সালে বেশ কয়েকজন পশ্চিমা নেতা মিখাইল গর্বাচেভকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে ন্যাটো আরও পূর্বে সম্প্রসারিত হবে না, যেমনটি ব্যক্তিগত কথোপকথনের স্মারক দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি মেনে চলা হয় নি। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ন্যাটো কর্তৃক কোন সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়নি। রাশিয়া নেটোর সদস্য ছিল না। তবে ১৯৯১ সালে উত্তর আটলান্টিক সহযোগিতা পরিষদ (North Atlantic Cooperation Council) এবং ১৯৯৪ সালে পার্টনারশিপ ফর পিস প্রোগ্রামে ( Partnership for Peace programme) যোগ দিয়েছিল। ১৯৯৭ সালে নেটো এবং রাশিয়া অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে একটি স্থিতিশীল, নিরাপদ এবং অবিভক্ত মহাদেশ তৈরির জন্য একসঙ্গে কাজ করার জন্য পারস্পরিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। স্নায়ুযুদ্ধের সমাপ্তির পর, প্রথম অপারেশন, ১৯৯০ সালে অ্যাঙ্কর গার্ড এবং ১৯৯১ সালে এস গার্ড , কুয়েতে ইরাকি আক্রমণের দ্বারা প্ররোচিত হয়েছিল। KLA বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং আলবেনিয়ান বেসামরিকদের উপর সার্বিয়ান নেতৃত্বাধীন ক্র্যাকডাউন বন্ধ করার প্রয়াসে,কসোভোতে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। ২০০১ সালে ৪ই অক্টোবর ন্যাটো আফগানিস্থানে অভিযান শুরু করে এবং ২০২১ সালে তা শেষ হয়। এছাড়া ২০০৪ সালে ইরাকে সাদ্দাম হোসেনের বাহিনীর বিপরীতে যুদ্ধ করে। এছাড়া এডেন উপসাগর বিরোধী জলদস্যু দমন, লিবিয়ায় ২০১১ সালে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে। বর্তমানে ন্যাটো সিরিয়াতে অভিযান পরিচালনা করছে। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জানা যায় সুইডেন এবং ফিনল্যান্ডও ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার জন্য আবেদন করেছে।
No comments